জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : ষাটোর্ধ পানচাষী মোতালেব ও তার মেয়ে আকলিমা পোড়া বসতঘরে দাড়িয়ে অঝোরে কাঁদছে। চোখ মুছতে মুছতে তারা জানায় ঋণ নিয়ে পান
চাষ করেন। মোতালেব পান বিক্রি করে ছেলেময়েদের লেখা পড়া করান। তিলে তিলে গড়েছেন
ঘর ,ঘরের আসবাব পত্র। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র কিছুই আগুন থেকে বাঁচাতে পারেননি।
বৃদ্ধ বয়সে এখন কি করবেন কোথায় যাবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। পাশ্ববর্তী
আবদুল ওয়াহাব (৪০) শুটকি বিক্রি করেন। ঘরের ছাদে শুটকি গুদামজাত করেছেন।
অগ্নিকান্ডে তার ৩ লক্ষাধিক টাকার শুটকি পুড়ে গেছে। মোতালেব আর ওয়াহাবের মতো
আরো ৫০ পরিবারের কপাল পুড়েছে। বসতঘর আগুনে পুড়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে ,
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র। খোলা আকাশের নিচে এখন তাদের ঠিকানা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় সরেজমিনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার
রশিদিয়া পাড়া পাড়া ৯ ওয়ার্ডে অগ্ন্ িকবলিত এলাকায় গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) গভীর রাতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকান্ডের
ঘটনা ঘটে বলে জানান, চট্টগ্রাম কালুরঘাট ফায়ার ষ্টেশনের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার
পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দি।
অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ নারায়ন চক্রবত্তী আরো ২ ইউনিটকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অপরদিকে উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের চারাবটতল এলাকার লাল মিঞা সওদাগর বাড়ির ৬টি ঘর ভষ্মিভূত হয়েছে। এতেও আনুানিক অর্ধলক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার গাজী
রশিদিয়া পাড়া ৯ নং ওয়ার্ডে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১১টা ৪০ মিনিটে বৈদ্যুতিক শর্ট
সার্কিট থেকে হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। মুহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা
আশপাশের বসত ঘরে ছড়িয়ে পরে। খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে
উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্ঠা করে। আগুনের ভয়াবহতা দেখে পরে কাপ্তাই ও
কালুরঘাট ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ৩টি ইউনিট দীর্ঘক্ষনের প্রচেষ্ঠায় আগুন
নিয়ন্ত্রনে আনে। আগুনে ৪০ টি কাঁচা ঘর, ২টি মাটির ঘরসহ অর্ধ শতাধিক ঘর পুড়ে
যায় বলে জানান স্থানীয়রা। অগ্নিকান্ডে আনুমানিক দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছে।
এদিকে একই দিন দুপুর ১২টায় চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের লাল মিঞা সওদাগর বাড়ির
রহম আলীর পুত্র মো. আব্দুল ছমদের রান্নাঘর থেকে আগুনের সুত্রাপাত হয়ে মুহুর্তে আগুন
আশপাশের ঘরে ছড়িয়ে পরে। খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া ও কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের দুটি
ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে মো. খোকন,
মো. জাহাঙ্গীর, মো. আব্দুল ছমদ, আব্দুল মাবুদ, কবির আহমদও মো. আলমের বসতঘর
সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়। এতে তাদের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান
ইদ্রিছ আজগর তাৎক্ষনিকভাবে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করেন।
স্থানীয় করিম উদ্দিন হাছান জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ অত্যন্ত দরিদ্র। তারা
অধিকাংশ কৃষি ও চাকুরীজীবি। চাষবাস করে তাদের সংসার চলে। অগ্ন্কিান্ডে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারা অসহায় পড়েছে।
অগ্নিকান্ডে খবরে ঘটনাস্থলে যান রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলী
শাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদর, রাঙ্গুনিয়া
থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির, পৌরসভার মেয়র শাহজাহান
সিকদার। রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ড. হাছান মাহমুদকে তারা অগ্নিকান্ডের বিষয়টি
জানিয়েছেন। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে এমপির পক্ষ থেকে প্রাথমিক ভাবে
২০ কেজি চাল ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক পরিবারকে
পুনর্বাসন করতে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও এমপির পক্ষ থেকে জানানো
হয়েছে।